Select Page

সিভিয়ার অ্যাজমা নিরাময়ে ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি’র খুঁটিনাটি

সম্প্রতি দেশব্যাপী চালিত এক জরিপ থেকে জানা যায় যে, ভারতে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগে ভুগছেন। এই গবেষণায় আরও জানা গেছে যে, বিভিন্ন ক্লিনিকাল জটিলতা এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে দেশে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। মানবদেহে এই অ্যাজমা যদি দীর্ঘস্থায়ীভাবে থাকে, তাহলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। একটি শিশু বা একজন প্রাপ্ত বয়স্কের অ্যাজমা রোগ যদি প্রাথমিক পর্যায়েই সনাক্ত করা যায়, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা সম্ভব।

 সিভিয়ার অ্যাজমা

রোগীদের আনুসাঙ্গিক ওষুধ সেবনের পরেও শতকরা ৫%-১০% রোগীদের অ্যাজমার লক্ষণগুলো শরীরে বিরাজ করে। এসকল রোগীদের অ্যাজমার ধরণটি সিভিয়ার বা গুরুতর হিসেবে ধরা হয়। এমন সমস্যা শ্বাসনালীর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্রঙ্কিয়ালের মসৃণ পেশিগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসকার্জে প্রধান ভূমিকা পালন করে। কারও সিভিয়ার অ্যাজমা হলে এই মসৃণ পেশীগুলোতে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা স্থান গ্রহণ করে যা শ্বাসনালীকে পাতলা করে তোলে। ফলে রোগীর কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুক চেপে আসা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। সিভিয়ার অ্যাজমা রোগীদের খুব ঘন ঘন অ্যাজমা অ্যাটাক হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু মাইল্ড, এবং কিছু অ্যাটাক মারাত্মক আকার ধারণ করে।

Treatment of severe Asthma

অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসনালীর চারপাশে মসৃণ টিস্যু তুলনামূলক নেই বললেই চলে। অ্যাজমা অ্যাটাকের সময় এই টিস্যুগুলো শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে যা শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্যাবলীকে কঠিন করে তোলে। অ্যাজমার ওষুধগুলো শ্বাসনালী খুলতে সাহায্য করে। তবে সিভিয়ার অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত এ ওষুধ তেমন কার্যকর হয় না।  

 ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি

ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি (বিটি) একটি ব্রঙ্কোস্কোপিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে সিভিয়ার অ্যাজমা নিরাময় করা যায়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকীর্ণ বায়ুপথ প্রসারিত হয়ে বায়ুপ্রবাহ (শ্বাসকাজ) সহজ করা সম্ভব। একজন দক্ষ পালমোনোলজিস্ট দিয়েই ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি করা হয়ে থাকে। তিন সপ্তাহে তিন সেশনে এই চিকিৎসা করা হয়। প্রতিটি সেশন প্রায় ১ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজিস্ট এই তিন সেশনে যথাক্রমে ফুসফুসের ডানদিকের নিচের লোব, বামদিকের নিচের লোব এবং উভয় উপরের লোবগুলিতে চিকিৎসা করে নিরাপদ এবং সর্বোত্তম ফলাফল নিশ্চিত করে। সাধারণত এই চিকিৎসায় কোন কাঁটা-ছেঁড়া করা লাগেনা বলে রোগীকে সেশনের পরপরই রিলিজ করে দেওয়া হয়।   

 ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টির উপকারিতা ও ঝুঁকিসমূহ

আজ পর্যন্ত অ্যাজমা রোগ ইনফ্ল্যামেটোরি রেসপন্স-এর উপর ভিত্তি করে নিরাময় করা হয়েছে। ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি’র মাধ্যমে শ্বাসনালীর মসৃণ পেশীকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বিটি প্রক্রিয়ার শ্বাসনালী প্রশস্ত এবং উন্মুক্ত হতে সক্ষম হয়, ফলে যেসব রোগীর অ্যাজমা ওষুধে নিরাময় সম্ভব হয়না, তারাও এই প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখতে পান।

 যেকোনো চিকিৎসারই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি (বিটি)’র ফলে রোগীর শ্বাসকাজে সাময়িক বাধা আসতে পারে। রোগীর সঠিক যত্ন নিলে এই সমস্যাটি এক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়। এ সময় পালমোনোলজিস্ট রোগীর সার্বিক শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রয়োজনে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করেন।

ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি গত পাঁচ বছরে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি’র মাধ্যমে সিভিয়ার অ্যাজমা অ্যাটাক ৩২% পর্যন্ত কমে আসে। তবে এই পদ্ধতিতে অ্যাজমা নিরাময়ের জন্য রোগীকে অবশ্যই অধূমপায়ী এবং বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি একজন রোগীকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে, তা নয়। এই চিকিৎসার পরেও রোগীকে ইনহেলার এবং ওষুধের উপরে থাকতে হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি রোগীর ওষুধের ডোজ এবং রিলিভার ইনহেলারের প্রয়োজনীয়তা তুলনামূলক হ্রাস করতে সহায়তা করে।

References: