পালমোনোলজি এডিমা সম্পর্কে খুঁটিনাটি

পালমোনোলজি এডিমা সম্পর্কে খুঁটিনাটি

ফুসফুসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তরলের উপস্থিতি থাকলে তাকে বলা হয় পালমোনোলজি এডিমা। এতে আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট জনিত জটিলতা দেখা দেয়। হার্টের সমস্যা, নিউমোনিয়া, টক্সিন ও ঔষুধ, মানসিক দুর্বলতা এবং অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে পালমোনোলজি এডিমা হতে পারে। এছাড়া উঁচু স্থানে বা বিশেষ উচ্চতায় বসবাসকারী মানুষদেরও এই রোগ হতে পারে। পালমোনোলজি এডিমা আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক মেডিকেল সেবা অথবা বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষনের প্রয়োজন হয়। এর চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে অক্সিজেন প্রদান করতে হয় এবং নিয়মিত দেখাশোনা করতে হয়।

যেকোন রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে হলে সর্বপ্রথম সেই রোগের উপসর্গ ও কারণ সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে।

পালমোনোলজি এডিমা’র উপসর্গ ও রোগের কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো:

উপসর্গসমূহ

আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের ঘাটতি ও শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং শুয়ে থাকা অবস্থায় এই জটিলতা প্রবল হতে থাকে। হার্ট জনিত সমস্যা থাকলে রোগীর বুকে ব্যথা এবং হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে বা বুক ধড়ফড় করতে পারে। পালমোনোলজি এডিমা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। এছাড়া রোগীর ঘন ঘন কাশি হয় এবং কাশির সাথে রক্ত যেতে পারে।

দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে এর ব্যতিক্রম হলে অবস্থার অবনতি হতে পারে। অক্সিজেনের ঘাটতি, শ্বাসকষ্ট বা ডিসপেনিয়া, অতিরিক্ত ঘামা, রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই শ্রেয়।

কারণসমূহ

হার্টের সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, উভয় ক্ষেত্রেই পালমোনোলজি এডিমা দেখা দিতে পারে। হার্ট জনিত জটিলতা থাকলে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, হার্ট ভালভের সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের কারণে পালমোনারি এডিমা হতে পারে।

অন্যদিকে, হার্ট সুস্থ থাকলে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসস্ট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস), উচ্চতাভীতি, পালমোনারি এম্বোলিজম, ভাইরাল ইনফেকশন, ঔষুধের প্রতিক্রিয়া, ফুসফুস জনিত সমস্যা, টক্সিনের সংস্পর্শ এবং ধূমপানের ফলে পালমোনারি এডিমা হতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং উপসর্গ দেখা গেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে সতর্ক আছেন বলে যে আপনি রোগাক্রান্ত হতে পারেন না, তা কিন্তু নয়। সতর্কতার সাথে চাই সচেতনতা। পালমোনোলজি এডিমা আক্রান্ত হলে বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। তবে এই রোগ সহজে নির্ণয়যোগ্য এবং চিকিৎসায় বাড়তি ঝামেলা নেই।

আসুন জেনে নেওয়া যাক পালমোনোলজি এডিমা রোগের ঝুঁকি, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু তথ্য:

ঝুঁকি এবং জটিলতাসমূহ

পালমোনারি এডিমা ধরা পড়লে একদমই অবহেলা করা ঠিক নয়। এতে করে হার্টের উপর চাপ পড়ে এবং ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডান দিকের ভেন্ট্রিকেল-এর প্রাচীর বা পেশী খুবই পাতলা হয়, যার ফলে তা দুর্বল এবং ঝুকিপূর্ণ রূপ ধারণ করতে পারে। হার্টের উপর সৃষ্ট বাড়তি চাপের ফলে শরীরের অন্যান্য অংশেও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ফলস্বরূপ পেট, ফুসফুসের আশপাশ এবং লিভার ফুলে যেতে পারে।

পরীক্ষা এবং রোগ নির্ণয়

প্রথমেই একবার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এরপর ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) ও বুকের এক্স-রে করা হয়। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য পালস অক্সিমেট্রি পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি হার্ট এবং রক্তনালীর অবস্থা নির্ণয়ে দুই ধরনের ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়, যার মাধ্যমে চিকিৎসকরা ফুসফুসের ক্যাপিলারী এবং হার্টের রক্তনালীগুলোর চাপ নির্ণয় করে।

চিকিৎসা এবং করণীয়

পালমোনারি এডিমা’র প্রাথমিক চিকিৎসা হলো যথাযথ অক্সিজেন সরবরাহ এবং ঔষধ। ফেইস মাস্ক বা নেজল ক্যানেলার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়, তবে প্রয়োজনে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া যেসব রোগী উঁচু স্থানে বসবাস করে তাদের উচিৎ শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দেওয়া এবং শরীর উষ্ণ রাখা। কারণ অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে এবং ঠান্ডার মধ্যে থাকলে যেকোন সময় অবস্থার অবনতি হতে পারে।  

সুস্থভাবে বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষেরই কাম্য। আর সুস্থভাবে বাঁচতে হলে সচেতন হতে হবে, রোগ সম্পর্কে জানতে হবে, সতর্ক হতে হবে এবং রোগাক্রান্ত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।