অস্টিওআর্থ্রাইটিস – আসুন এই বিষয়ে আরও কিছু জানি

অস্টিওআর্থ্রাইটিস – আসুন এই বিষয়ে আরও কিছু জানি

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস (ওএ), যা ডিজেনারেটিভ জয়েন্ট ডিজিজ নামেও পরিচিত, দেখা দেয় আর্টিকুলার কার্টিলেজের ব্যবহারিক ক্ষতি ও ক্রমাগত ক্ষয়ের কারণে। এই রোগ বয়স্ক মানুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস দুই প্রকারের হয়, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস হল কোন সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই আর্টিকুলার কার্টিলেজ ক্ষয়ে যাওয়া। সেকেন্ডারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস হল আঘাত পাওয়ার ফলে সন্ধিস্থল জুড়ে বলের ঘনত্ব অস্বাভাবিক হওয়া অথবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের (আরএ) মত অস্বাভাবিক আর্টিকুলার কার্টিলেজের ফলাফল।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস সাধারণত সময়ের সাথে সাথে আরও বেড়ে যায় এবং এক সময় শারীরিক অক্ষমতায় পৌঁছায়। এর উপসর্গের তীব্রতা ব্যক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন হয়। তবে, সময়ের সাথে সাথে এগুলি সাধারণত আরও তীব্র হয়, আরও ঘন ঘন দেখা দেয় এবং আরও বেশী করে অশক্ত করে দেয়। অগ্রগতির হারও প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা হয়। সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে থাকে হাঁটুর ব্যাথা যা শুরুতে অল্প হয় এবং কাজ করার সাথে সাথে বাড়তে থাকে, হাঁটু আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া ও ফুলে ওঠা, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা বিশ্রাম নেওয়ার পরে ব্যাথা করা, এবং সময়ের সাথে সাথে ব্যাথা আরও বেড়ে যাওয়া। হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা শুরু হয় চিরাচরিত পদ্ধতিতে এবং তা ব্যর্থ হলে অস্ত্রোপচারের বিকল্প ব্যবহার করা হয়। ওষুধের সাহায্যে আরএ এবং অন্যান্য প্রদাহজনক লক্ষণের অগ্রগতি কমানো গেলেও, বর্তমানে হাঁটুর অস্টিওআর্থাইটিসের চিকিৎসার জন্য কোন প্রমাণিত রোগ নিরাময়কারী সামগ্রী নেই।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগের কারণ

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রারাইটিস, কারণের উপর নির্ভর করে প্রাইমারি অথবা সেকেন্ডারি হিসাবে শ্রেনীভুক্ত হয়। প্রাইমারি অস্টিওআর্থ্রাইটিস হল কোন জ্ঞাত কারণ ছাড়াই আর্টিকুলার কার্টিলেজ ক্ষয়ে যাওয়া। এটা সাধারণত ঘটে বয়স এবং ব্যবহারজনিত ক্ষতির কারণে। সেকেন্ডারি হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রারাইটিস হল কোন জানা কারণে আর্টিকুলার কার্টিলেজ ক্ষয়ে যাওয়ার পরিণতি।

healthy-osteoarthritiscovered-knee

সেকন্ডারি অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সম্ভাব্য কারণ

  • আঘাত পাওয়া
  • অস্ত্রোপচার
  • জন্মগত অথবা পায়ের ত্রুটি
  • ত্রুটিপূর্ণ অবস্থান (ভারাস/ ভালগাস)
  • স্কোলিওসিস
  • রিকেট
  • হিমোক্রোম্যাটোসিস
  • কন্ড্রোক্যালসিনোসিস
  • অক্রোনোসিস
  • উইলসন ডিজিজ
  • বাত
  • সিউডোগাউট
  • অ্যাক্রোমেগালি
  • অ্যাভাস্কুলার নেক্রোসিস
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
  • সংক্রামক আর্থ্রাইটিস
  • সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস
  • হিমোফিলিয়া
  • প্যাজেট রোগ
  • সিকল সেল অসুখ

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়সমূহ

সংশোধনযোগ্য

  • গাঁটের আঘাত
  • পেশা – দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা এবং বারংবার হাঁটু মোড়া
  • পেশীর দূর্বলতা অথবা ভারসাম্যহীনতা
  • ওজন
  • স্বাস্থ্য – বিপাকজনিত উপসর্গ

অসংশোধনযোগ্য

  • লিঙ্গ – পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশী দেখা যায়
  • বয়স
  • জেনেটিক্স
  • জাতি

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মূল্যায়ন

রোগের এক বিস্তারিত অতীত তথ্য ও শারীরিক অবস্থার তথ্য সহ, রেডিওগ্রাফিক ইমেজিংও দরকার হয়। সুপারিশ করা ভিউর মধ্যে থাকে দাঁড়ানো অবস্থায় অ্যান্টেরোপস্টেরিয়র (এপি), দাঁড়ানো অবস্থায় পার্শ্বীয় সম্প্রসারণ এবং প্যাটেলার একটি স্কাইলাইন ভিউ। দাঁড়ানো অবস্থায় হাঁটুর 45-ডিগ্রী পোস্টেরোঅ্যান্টেরিয়র (পিএ) ভিউ নেওয়া যেতে পারে, যা হাঁটুর ওজন বহনকারী তলের আরও ভালো মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে। অনেক সময়, বিকৃতির পরিমাণ ও নিম্ন প্রান্তের সামগ্রিক বিন্যাস দেখার জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় পুরো পায়ের ছবি নেওয়া হয়। এটা জানা দরকার যে রোগীর হাঁটুর রেডিওগ্রাফ অবশ্যই দাঁড়ানো অবস্থায় নিতে হবে। এর ফলে সন্ধিস্থলে বিদ্যমান স্থান সঙ্কীর্ণতার একটি যথাযথ ধারণা পাওয়া যায়। অনেক সময় রোগীকে চিৎ করে শুইয়ে ছবি নেওয়া হয়, যার ফলে সন্ধিস্থলের স্থান ও বিন্যাস সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা পাওয়া যায় এবং তা হাঁটুর সম্ভাব্য অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মূল্যায়নে কখনই ব্যবহার করা যাবে না।

knee-problem-point

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা অস্ত্রোপচারবিহীন ও অস্ত্রোপচার সহ পদ্ধতিতে ভাগ করা যায়। প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচারবিহীন ব্যবস্থায় চিকিৎসা শুরু হয় এবং এই উপায় কার্যকর না হলে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে হয়। হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন অস্ত্রোপচারবিহীন পদ্ধতি আছে। এই ব্যবস্থাগুলি রোগের মূল সমস্যার সমাধান করতে পারে না, তবে ব্যাথা ও বিকলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কম রাখতে পারে।

অস্ত্রোপচারহীন চিকিৎসা ব্যবস্থা

  • কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ
  • ফিজিক্যাল থেরাপি
  • ওজন কমানো
  • হাঁটুর ব্রেসিং
  • অ্যাসেটামিনোফেন
  • ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি ড্রাগ (এনসেইড)
  • COX-2 ইনহিবিটর
  • গ্লুকোসামিন ও কন্ড্রইটিন সালফেট
  • কর্টিকোস্টেরয়েড ইঞ্জেকশন
  • হ্যায়লুরনিক অ্যাসিড (এইচএ)

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের উপসর্গ থাকা সকল রোগীর চিকিৎসা শুরু হয় রোগ সম্পর্কে তাদের অবগত করা ও ফিজিও থেরাপি দেওয়ার মাধ্যমে। তত্বাবধানের অধীনে করা বিভিন্ন ব্যায়াম ও কয়েকটি বাড়িতে করতে পারা ব্যায়ামের সংমিশ্রণে সেরা ফলাফল দেখতে পাওয়া গেছে।

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্ত পর্যায়ে ওজন কমানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ এবং হালকা এরোবিক ব্যায়াম, ওজন কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে হাঁটুর ব্রেসিংয়ের মধ্যে পড়ে আনলোডার প্রকারের ব্রেস যা হাঁটুর নির্দিষ্ট অংশ থেকে ভার দূরে সরিয়ে রাখে। এই ব্যবস্থা কাজে লাগে যেক্ষেত্রে পার্শ্বীয় বা মধ্যবর্তী অংশ জড়িত থাকে, যেমন ভালগাস বা ভারাস বিকৃতি।

অস্টিওআর্থ্রাইটিসের উপসর্গগুলির ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীদের ওষুধও দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরণের এনসেইড উপলব্ধ আছে, এবং ডাক্তারবাবুর পছন্দ, রোগীর গ্রহণক্ষমতা, দাম ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে এগুলির মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়।

পরিপূরক পথ্য হিসাবে গ্লুকোসামিন ও কন্ড্রইটিন দেওয়া হয়। এগুলি আর্টিকুলার কার্টিলেজের গঠনমূলক উপাদান এবং মনে করা হয় এগুলি আর্টিকুলার কার্টিলেজের স্বাস্থ্য ফেরাতে সক্ষম হয়।

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের উপসর্গগুলির ক্ষেত্রে ইন্ট্রা-আর্টিকুলার কর্টিকোস্টেরয়েড ইঞ্জেকশন উপযোগী হয়, বিশেষ করে যেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রদাহজনক উপাদান থাকে।

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ইন্ট্রা-আর্টিকুলার হ্যায়লুরনিক অ্যাসিড ইঞ্জেকশনও (এইচএ) আরেকটি বিকল্প। ঘর্ষণ হ্রাসকারী তরল হিসাবে এইচএর সন্ধিস্থলে স্থানীয় প্রয়োগ, এই স্থানে এইচএর স্বাভাবিক উৎপাদন বৃদ্ধি করে।

অস্ত্রোপচার সহ চিকিৎসা ব্যবস্থা

  • অস্টিওটমি
  • ইউনিকম্পার্টমেন্টাল নী অর্থ্রোপ্লাস্টি (ইউকেএ)
  • টোটাল নী অর্থ্রোপ্লাস্টি (টিকেএ)

References: