শুধু ফুসফুস নয়, কিডনির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা
বিশ্বজুড়ে এখনো কঠোর অবস্থানে রয়েছে সারস-কোভ-২ ভাইরাস, যা কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস নামে অধিক পরিচিত। ২০১৯ সালের শেষ দিকে মানবশরীরে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাস সনাক্ত করা হয় এবং বিগত তিন বছরে অসংখ্য গবেষণার পর ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। মানবদেহে অন্যান্য জটিলতা থাকাকালীন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ স্বাস্থ্যের ওপর আরও ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে। এর মধ্যে কিডনি জনিত জতিলতা অন্যতম। মেডিকেল ভাষায় একে নেফ্রোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বলা হয়।
অনেকের মতে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস শুধু ফুসফুসের মাধ্যমেই বিস্তার ঘটায়। তবে এটি সঠিক নয়। এইচএসিই২ নামক রিসেপ্টরের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানব কোষে প্রবেশ করে। এই রিসেপ্টরটি শুধু ফুসফুসেই নয়, কিডনিতেও থাকে। যার থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে, কিডনির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে সক্ষম। যেকোন বয়সের মানুষই করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত বয়স্করা যেহেতু বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভোগেন তাই তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, কিডনি জনিত জটিলতা আছে এবং যাদের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে।
সাম্প্রতিক একটি মেটা-বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, করোনা আক্রান্ত প্রায় ১৮% রোগী কিডনি জটিলতার ঝুঁকিতে থাকেন, যার সবচেয়ে সাধারণ স্তর হলো প্রস্রাবে মাধ্যমে প্রোটিনের ঘাটতি এবং গুরুত্বর স্তর হলো কিডনি ফেইলিওর। প্রায় ৫% রেনাল জটিলতার রোগীদের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে। যাদের ইতোমধ্যে ডায়ালাইসিস চলছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের রোগীদের বাড়ির বাইরে যেতে হয় না, ফলে তারা কম ঝুঁকিতে থাকেন। তবে যারা সপ্তাহে প্রায় তিন/চারবার ডায়ালাইসিস-এর জন্য হাসপাতাল যান, তাদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তাই উক্ত রোগীদের হাত স্যানিটাইজ, মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করা আবশ্যক। যেসব রোগীর ডায়ালাইসিস চলছে বা যারা কিডনি প্রতিস্থাপন করবেন তাদের নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উত্তম।
যাদের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে তারা যেসব ঔষধ সেবন করছে তা ধীরে ধীরে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে তারা করোনা আক্রান্ত হওয়ার বাড়তি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই সুরক্ষিত থাকতে হলে সকল স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করা তাদের জন্য অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে, রোগীর নিয়মিত ঔষধ খাওয়া এবং ভার্চ্যুয়াল পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে রোগীর ইমিউনোসপ্রেসিভ ঔষধগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সাধারণ রোগীদের তুলনায় যারা কিডনি জটিলতা ও করোনা উভয় রোগে আক্রান্তদের ঝুঁকি বেশি। তাই যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং উপরোক্ত নিয়মাবলী অনুসরণের মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব। সুস্থ কোন ব্যক্তি উক্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আগামী দিনগুলোতে আমাদের করোনার সাথে মানিয়ে চলতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনার ডেলটা, ওমিক্রন ইত্যাদি ভেরিয়েন্ট সেই আভাসই দিচ্ছে। তাই বাড়তি দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে যদি আমরা সকল স্বাস্থ্যবিধি সঠিক উপায়ে পালন করি, তাহলেই করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব।
About Author –
Dr. Sashi Kiran A, Consultant Nephrologist, Yashoda Hospitals – Hyderabad
MD (Pediatrics), DM (Nephrology)